প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি সব দেশের মতো বাংলাদেশেও হচ্ছে। একই কথা রিজার্ভেও। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কেননা আপদকালীন খাদ্য মজুত রয়েছে। এত বেশি আলোচনার কারণে আজ প্রায় সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। এই সতর্কতা দেশের জন্য ভালো।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, কোভিডের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, যাতায়াত, আমদানি-রপ্তানি সব বন্ধ ছিল। তাছাড়া আরেকটা কথা হচ্ছে, যারা হুন্ডির ব্যবসা করে, যাতায়াত না থাকায় তারা (করোনার সময়) হুন্ডির ব্যবসা করতে পারেনি। ফলে টানা ব্যাংকে লেনদেন করতে হয়েছে। ফলে আমাদের রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল। এরপর সবকিছু যখন চালু হলো, তখন খরচ হবেই। আপৎকালীন সময়ের জন্য আমাদের যদি খাদ্য মজুত থাকে, তখন রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার ব্যাপার নেই। এটা নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রিজার্ভ বলতে বলতে মানুষকে মানুষকে এত সচেতন করে ফেলেছি, সবাই এখন রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। সবাই জিডিপি নিয়ে কথা বলে। এটা লক্ষণ ভালো, কারণ আমাদের মানুষ (এসব বিষয়ে) নজর দেওয়া শিখছে। কিন্তু জিনিসের দাম কমানো, এখানেও অনেক খেলা হয়। আজকে দেখলাম আলু যেখানে রাখে, সেখানে ডিম নিয়ে রাখা। আলুর জন্য যে হিমাগার সেখানে তো ডিম রাখার কথা নয়। কিন্তু ডিম নিয়ে আলুর স্টোরে রাখা হচ্ছে। এমন অনেক ঘটনা ঘটছে।

জমি অনাবাদি না রেখে সবাইকে চাষাবাদ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি টুঙ্গিপাড়ায় আমার নিজের জমি আবাদ করতে শুরু করেছি। আমাদের বেশ কিছু জমি অনাবাদি ছিল, সেই সঙ্গে আশপাশে যাদের জমি অনাবাদি ছিল পুরো জায়গা পরিষ্কার করে আমরা চাষ শুরু করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে আমরা যদি আমাদের সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে পারি আমাদের কোনো অভাব হবে না। আমাদের শরীয়তপুরের তরিতরকারি সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। ফুল রপ্তানি হচ্ছে। এভাবে আমরা চতুর্দিকে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে অর্জন, এগুলো ধরে সামনের দিকে এগোতে হবে। স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে আমরা সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। পাশাপাশি ২১০০ সালে বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান করে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আমরা চুক্তি করে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যে ঘটনাগুলো ঘটছে, মানুষ হত্যা, নারী হত্যা, শিশু হত্যা থেকে শুরু করে রীতিমতো গণহত্যা। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর প্রতিবাদ করি, আমি যেখানেই যাই প্রতিবাদ করি এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাই। এ বিষয়ে আমাদের নীতি সব সময় ঠিক থাকবে। কারণ আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটুক। ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে আমরা শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছি। আজকেই সেটা পালন করলাম। এ সময় মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গও উলে­খ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখন খুবই খারাপ অবস্থা। এখন এরা কবে যে ফেরত যাবে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন যুদ্ধের জন্য দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বলেন, পরিবহণ থেকে শুরু করে সবই কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। তবুও আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তেল, গ্যাস, ভোজ্য তেলমহ যা যা লাগে আমরা ক্রয় করি। আমরা পারিবারিক কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে সেখানে চাল, ডাল, তেল যাতে তারা অল্প দামে কিনতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এটাই জোট নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জোটের শীর্ষ নেতারা। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা।

এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি- জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াসহ জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।